হার্টের অসুখে ভুগছিলেন সাংবাদিক সালমান ফরিদ। ডাক্তাররা দিয়েছিলেন বাইপাস সার্জারির পরামর্শ। দেশের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ ছিল; হার্টে রিং বসালেই হবে। ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই মতামত দেয়ার পর রিং স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন সালমান। নিজ শহর সিলেটেই আছে হার্ট ফাউন্ডেশন। এখানেই রিং স্থাপন করা যাবে। দেশের নামকরা চিকিৎসক ও সিলেটের মানুষের প্রিয় চিকিৎসক খালেদ মহসিনও দিলেন সায়। নিজেই রিং স্থাপনের কাজটি করবেন তিনি। দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর ১৩ই সেপ্টেম্বর বিকালে ভর্তি হন সিলেটের হার্ট ফাউন্ডেশনে। সেখানে চিকিৎসক হার্টে রিং বসালেন ঠিকই কিন্তু হার্ট ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় প্রাণ হারাতে বসেছিলেন সালমান ফরিদ।
মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সালমান বাসায় ফিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেছেন সে ঘটনা। ফেসবুকে লেখেন- ‘আমি কী নালিশ দিবো! কী আর বিচার চাইবো? ১৪ই সেপ্টেম্বর বিকালে সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশনে আমার হার্টে ৩টি রিং বসানো হয়। আলহামদুলিল্লাহ, আমার প্রিয় চিকিৎসক প্রফেসর ডা. খালেদ মহসিন বেশ পরিশ্রম করে রিং বসানোর কাজটি সম্পন্ন করেন। তখনও কোনো সমস্যা হয়নি। আমাকে সিসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা কিংবা ৮টার দিকে দু’জন লোক আসেন আমার কাছে। বলেন- আপনার এনজিওপ্লাস্টির সময় উরুতে বসানো দুটি পাইপ/বড় ক্যানোলা রিমুভ করবো। ভয় পাবেন না, লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া দেয়া হবে। বলেই তারা আমার ডান পায়ের উরুর গোড়ার দিকের ব্যান্ডেজ না ভিজিয়ে খুব দ্রুত আর জোরে খুলে ইনজেকশন পুশ করলেন এবং কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে পাইপ/বড় দুটো ক্যানোলা এক টানে খুলে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার শরীর ঝিমিয়ে যেতে শুরু করলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। অক্সিজেন, হার্টের পালস রেট ৩/৪ সেকেন্ডের মধ্যে ৩০-২৫ এ নেমে আসে। আমার চোখ উল্টে গেল। ঝাপসা দেখছি। একজন আমার বুকে কিল-ঘুষির মতো করে চাপ দিচ্ছিলেন এবং আমাকে বার বার বলছিলেন কাশি দিতে। পাগলের মতো ভয়ার্ত কণ্ঠে চিৎকার দিয়ে বার বার বলছেন, ‘কাশি দেন, কাশি দেন, জোরে জোরে কাশি দেন…’ আমিও জীবনের শেষ ও সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাশি দিচ্ছিলাম। এ সময় একজন খুব দ্রুত একটি ইনজেকশন এনে আমার বাম হাতের ক্যানোলা দিয়ে পুশ করলেন। সিসিইউ, পিসিসিইউ, ওটিসহ হাসপাতালের সব ডাক্তার, নার্স এসে জড়ো হয়েছেন আমার চারপাশে। তাদের চোখ ভয়ার্ত। সবশেষ মনিটরে চোখ গিয়েছিল। একটি দেখেছি শূন্যের কোটায় আরও কোনো একটি ১৫/২০ এ ছিল।
কালেমা পড়ছি আর কাশি দিচ্ছি প্রাণ শপে। একসময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। যখন জ্ঞান ফিরলো, রাত তখন সাড়ে ১১টার দিকে হবে। দেখলাম, শিয়রে প্রফেসর ডা. খালেদ মহসিন। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। হাতে স্নেহ এবং ভালোবাসা ছিল। পরে শুনেছি, আমি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর্যায়ে চলে গিয়েছিলাম! আমার হার্ট ফেইলিউরের কাছাকাছি ছিল। কিন্তু কেন? কার দোষে? স্ট্যাটাসে সালমান বলেন- ওই দুই লোকের খামখেয়ালিপনার বলি হতে যাচ্ছিলাম আমি? তারা কি ভুলভাবে রিমুভ করছিলেন? তারা কি ভুলভাবে লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েছেন? নাকি অ্যানেস্থেসিয়া দেয়ার পর বড্ড তাড়াহুড়ো করছিলেন? কারণ অ্যানেস্থেসিয়া দেয়ার পরও আমি খুব ব্যথা পেয়েছিলাম। এমনকি প্লাস্টার রিমুভ করার সময় উরুর পরো জায়গাটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছিল! এটি কি তাদের অদক্ষতা? রোগীর প্রতি চরম অমনোযোগিতা? তারা আমার দিকে মনোযোগ দেয়ার চেয়ে খোশগল্পে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। এত বড় একটি সেন্সেটিভ কাজে তারা এতটাই বিন্দাস ছিলেন, তার মানে আমার জীবনের মূল্য তাদের কাছে একেবারেই ছিল না। সালমান ফরিদ নামের কেউ একজন তাদের ওমন খামখেয়ালির কারণে ওইদিন মারা গেলে আসলেই তাদের কিছু যেতে-আসতো না। আপনারাই বলুন এবার, এই ঘটনার পর আমি কি কারও কাছে নালিশ দিতে পারি? কারও কাছে বিচার চাইতে পারি?