ফ্রান্সের ড্রাইভিং লাইসেন্স (le permis de conduire) অর্জন একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্ত কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল বিষয়। অথচ ফ্রান্সের সাথে বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স বিনিময় চুক্তি থাকলে সহজেই বাংলাদেশী লাইন্সে ফ্রান্সে গাড়ি চালানোর সুজুগ পেতে পারতেন ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বার্মা, ভুটান, নেপাল সহ বিশ্বের অসংখ্য দেশের সাথে ফ্রান্সের ড্রাইভিং লাইসেন্স বিনিময় চুক্তি থাকলেও বাংলাদেশের সাথে ফ্রান্স সরকারের এ ধরনের কোন চুক্তি এখনো হয়নি। তাই ইমিগ্র্যান্ট কিংবা বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ফরাসী নাগরিকদের লাইসেন্স বিনিময় এর কোন সুযোগ নেই। বর্তমানে ফ্রান্সে যে সংখ্যায় বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্ট আছেন, গত ৬ বছর আগেও হয়ত এর ২০% বা ৫ ভাগের ১ ভাগও ছিল না। কাজেই এ ব্যাপারে একটা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এখন সময়ের দাবী। এ লক্ষ্যে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশ দুতাবাস, নেতৃবর্গ এবং সাংবাদিকরা ভূমিকা রাখতে পারেন বলে অনেকেই মনে করেন। আমরা মনে করি না এটা কোন কঠিন কাজ, প্রয়োজন শুধু বাংলাদেশ দুতাবাসের স্বদিচ্ছা। ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশীরা মনে করেন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশী দুতাবাস সামান্য উদ্যোগী হলে এ ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কমিউনিটি নেতাদের নিরবতার সমালোচনা করেন অনেকে। সাধারণ প্রবাসীরা মনে করেন নেতারা যদি কেবল প্রচার সর্বস্ব না থেকে সত্যিকার অর্থে প্রবাসীদের কল্যাণে কিছু করতে চান তাহলে দুতাবাসের মাধ্যমে এ ধরনের একটি চুক্তি করানো কঠিন হবে না। এক্ষেত্রে এখানকার সাংবাদিকরাও ইতিবাচক ভুমিকা রাখতে পারেন বলে মনে করেন প্রবাসীরা।
ড্রাইভিং লাইসেন্স বিনিময় চুক্তি কি?
ড্রাইভিং লাইসেন্স বিনিময় চুক্তি হলো দুইটি দেশের মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক একটি চুক্তি, যার মাধ্যমে একটি দেশের জাতীয় লাইসেন্স (আন্তর্জাতিক লাইসেন্স গ্রহণ না করার রেকর্ড আছে) এর বিনিময়ে অন্য দেশের জাতীয় লাইসেন্স প্রদান করা হয়। উদাহরণস্বরুপঃ বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের মধ্যে যদি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়, তাহলে একজন বাংলাদেশী অভিবাসী তার বাংলাদেশী লাইসেন্স এর বিনিময়ে ফ্রান্সের লাইসেন্স নিতে পারবে, অপরদিকে বাংলাদেশে বসবাসরত কোন ফরাসী তার ফরাসী লাইসেন্স এর বিনিময়ে বাংলাদেশ এর লাইসেন্স নিতে পারবে। আবার কোন বাংলাদেশী যদি তার নিজ বাংলাদেশী লাইসেন্স ফেরৎ চায়, সেক্ষেত্রে পুনরায় তার ফরাসী লাইসেন্স নিয়ে বাংলাদেশী লাইসেন্স ফেরৎ দেয়া হবে। যাদের লাইসেন্স ইউরোপের বাইরের আরো পরিস্কারভাবে ইউরোপীয়ান অর্থনৈতিক জোনের বহির্ভুত কোন দেশ থেকে প্রদান করা হয়েছে, ফ্রান্সে গাড়ী চালানোর জন্য সেই দেশের লাইসেন্সের বিনিময়ে ফরাসী লাইসেন্স নিতে হবে। ফ্রান্সের সাথে যেসমস্ত দেশের এই চুক্তি হয়েছে তার একটি তালিকা নিচের লিংকে দেয়া হলোঃ
http://www.diplomatie.gouv.fr/fr/IMG/pdf/Liste_permis_de_conduire_valables_a_l_echange_01_2014_cle8cc6c4.pdf
রিফিউজিদের জন্য ফ্রান্সের আইনে অনেক সুবিধা দেয়া হয়, ড্রাইভিং লাইন্সের ক্ষেত্রেও তারা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। সাধারণভাবে তাদেরকে কোন দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় না, তাই জন্মসুত্রে বাংলাদেশী হলেও তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বিনিময় সম্ভব। রিফিউজী যারা ড্রাইভিং লাইসেন্স পরিবর্তন করতে চান, তাদের প্লাষ্টিক কার্ড এ উল্লেখিত তারিখ হইতে ১ বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, আপনাকে যেদিন কার্ড দেয়া হবে ওই তারিখের অনেক আগেই আপনার কার্ডের বৈধতা বা Validité শুরু হয়, এবং কার্ড এ উল্লেখিত তারিখ হইতে ১ বছর হিসেব করা হয়। Première demande de titre de séjour বা বসবাস এর কার্ড এর জন্য প্রথম আবেদন এর রিসিপিসি Titre de Séjour বা বসবাস এর কার্ড হিসেবে গণ্য করা হয় না। বিদেশী লাইসেন্স এর বয়স ৩ বছরের কম হলে সাময়িক লাইসেন্স দেয়া হয়।
নন-ইউরোপীয়ানরা স্বল্প সময়ের জন্য ফ্রান্সে আসলে, উদাহরণস্বরুপঃ ছুটিতে, কিছু শর্তসাপেক্ষে বৈধ বিদেশী লাইসেন্স (ফরাসী অনুবাদ সহ জাতীয় লাইসেন্স বা আন্তর্জাতিক লাইসেন্স) দিয়ে সর্বোচ্চ এক বছর ফ্রান্সে গাড়ি চালাতে পারবে, এবং এই সময় শেষে তা বিনিময় করতে হবে, এবং যদি এক বছরের মধ্যে বিনিময় না করা হয়, তাহলে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে লাইসেন্স নিতে হবে, পাশ করলে সাময়িক লাইসেন্স দেয়া হয়। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং সুইজারল্যান্ড এর নাগরিকগণ সর্বোচ্চ ৬+১২ = ১৮ মাস বা দেড় বছর তার ইউরোপীয় দেশের লাইসেন্স দিয়ে ফ্রান্সে গাড়ী চালাতে পারবে।
বিদেশী ছাত্র এবং কুটনৈতিকগণ যতদিন ছা্ত্র বা কুটনৈতিক হিসেবে বৈধ ততদিন ড্রাইভিং লাইসেন্স বিনিময় না করেই তাদের বিদেশী লাইসেন্স দিয়ে ফ্রান্সে গাড়ী চালাতে পারবেন।
রাস্তায় পুলিশি কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে সাধারণত নিন্মুক্ত ৩টি ডকুমেন্টস চাওয়া হয়ঃ
১) le permis de conduire (ড্রাইভিং লাইসেন্স);
২) la carte grise (গাড়ীর নিবন্ধন কার্ড);
৩) l’attestation d’assurance (বীমার প্রত্যায়ন পত্র)।
পুলিশ সাধারণত কন্ট্রোলের সময় আপনার পরিচয় পত্র চায় না।
তথ্য সূত্র-“ফান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় ও অভিবাসন” -সৈয়দ আবুল হাসান (সবুজ)।