হ্যাপি রহমান, অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি – অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী শাহনাজ পারভীনের প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে।
আমার সকল ভালোবাসা—শিরোনামের অ্যালবামটি প্রকাশ করেছে জি সিরিজ। এর মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে।
জীবন যদি প্রতারণা করে, শিল্প দিবে ঠাঁই—মোহনীয় কথায় মালা গেঁথে আড়ম্বরপূর্ন আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লেখক,কবি ও চিকিৎসক আবুল হাসনাৎ মিল্টন। উপস্থাপক শুরুতেই বলেন, একজন শিল্পী তাঁর মন থেকে শিল্পচর্চা করেন যা মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বা শাহনাজ দু’জনই শিল্পের সাধক। শিল্পীরা ঈশ্বর ছুঁতে চায়, মানুষের মনকে ছুঁতে চায়। শাহনাজের এ পথ চলা শিল্পের প্রতি মমত্ববোধ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
মোড়ক উন্মোচন করেন প্রখ্যাত কালজয়ী সঙ্গীতশিল্পী শব্দ-সৈনিক সুরকার আপেল মাহমুদ।
১০টি রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে সাজানো হয়েছে এ অ্যালবাম—’আমার সকল ভালোবাসা’। প্রথম একক অ্যালবাম প্রসঙ্গে শাহনাজ বলেন, রবীন্দ্র সুরের মায়া ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুব টানে। এই অ্যালবামটি করার পেছনে আমার পরিবারের আন্তরিক উৎসাহ আমাকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।
শিল্পানুরাগী শাহনাজ পারভীন পেশায় একজন চিকিৎসক, কর্মক্ষেত্র সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ছোটবেলায় মায়ের আগ্রহে পড়াশুনার পাশাপাশি গান ও নাচ শিখেছেন। পেশাগত ব্যস্ততার জন্য সমান তালে সব কিছু চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে, আবেগ-অনুরাগ, ভালোলাগা-ভালোবাসা থেকে গান চর্চাটা নিয়মিত করে যাচ্ছেন। তাঁর গানে হাতে-কড়ি কলিম শরাফী, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাদী মোহাম্মদ এর কাছে। শাহনাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাঁর শিক্ষকবৃন্দের কাছে, শিল্পী শরমিন জাহান, চিকিৎসক আসাদুল কবির চপল, শিল্পী ফয়সাল আহমেদ এবং স্বামী চিকিৎসক রশিদ আহমেদের কাছে অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতার জন্য। তিনি মঞ্চের পাশাপাশি রেডিও-টিভিতেও গান করেছেন।
১০টি রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে সাজানো হয়েছে এ অ্যালবাম। প্রকাশিত অ্যালবামের গানগুলো হলো—’তুমি কোন কাননের ফুল’, ‘আমার হিয়ার মাঝে’, ‘চোখের আলোয়’, ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’,’আমার বেলা যে যায়’, ‘চাঁদের হাসি’,’আজি এ বসন্তে’, ‘আমার পরাণ’, ‘আজ জ্যোৎস্নারাতে’, ‘মোর বীণা ওঠে’।
মোড়ক উন্মোচন শেষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি আপেল মাহমুদ, চিকিৎসক রশীদ
আহমেদ, চিকিৎসক জেসি চৌধুরী ও চিকিৎসক শরীফ উদ্দৌল্লা। শব্দ সঞ্চালনায় নাদিম ও আলোকসজ্জায় ছিলেন চিকিৎসক শাহরিয়ার রানাl আমন্ত্রিত অতিথিদের অনুরুধে
শাহনাজ পারভীন অ্যালবাম থেকে তিনটি গান গেয়ে শোনান—আজি এ বসন্তে, চাঁদের হাসি ও চোখের আলোয়।
কথার ডালি সাজিয়ে আবারও মঞ্চে ফেরেন হাসনাৎ মিল্টন, বঙ্গবন্ধু কে স্মরণ করে তিনি বলেন—বঙ্গবন্ধু কবিদের মতো মানুষের মনকে ছুঁতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কথার যাদুতে কবিতার সৃষ্টি হতো, তাই তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ এ দেশকে স্বাধীন করেছিল। আপেল মাহমুদ তাঁর সৃষ্টি সুর ও কথায় গানে গানে বাংলার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। তাঁর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি আক্ষরিক অর্থেই অর্থবহ হয়ে উঠে।
উপস্থিত শ্রোতা-অতিথিদের অনুরুধে আপেল মাহমুদ গেয়ে শুনান—’কোকিল ডাকলে একুশের কথা মনে পড়ে’, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, এসময় সুরের মায়াজালে মগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন শ্রোতারা।কিন্তু গানটি শেষ করতে পারেননি তিনি, আবেগ-আপ্লূত হয়ে কেঁদে উঠেন। বাইরে সিডনির আকাশও ছিল বৃষ্টিস্নাত, আকস্মিক গুমট হয়ে উঠে অনুষ্ঠানস্থল। তিনি আক্ষেপ করে বলেন—দেশে-বিদেশে এখনও আমার গানগুলো নবীন-প্রবীণ সকল শিল্পীরাই গেয়ে থাকেন, কিন্তু আমার নামটি কেউ উচ্চারন করেন না, আফসোস!
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আপেল মাহমুদ শুধু একজন কন্ঠ যোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি একজন অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন।
অনুষ্ঠানের এ পর্বের পরিসমাপ্তি হয় আপেল মাহমুদের কণ্ঠে গাওয়া আরও দু’টো গান দিয়ে, ‘আমার প্রিয়াকে সাজিয়ে দিয়ে’, ও ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিব রে’।
অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়।