ঢাকা ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
পাথর ও মানুষ – শ্যামল বণিক অঞ্জন বালাগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযান: অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার গহরপুর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের কার্যকরী কমিটি গঠিত ছাত্রদের স্যালুট, অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করতে হবে- বিচারপতি নজরুল চৌধুরী ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালো‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ সামাজিক সংগঠন ‘সাফ’ এর উদ্যোগে প্যারিসে ‘বিশ্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দিবস ২০২৪’ পালন বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব থেকে শাহাব উদ্দিন ও জিল্লুর রহমান জিলুকে বহিস্কার প্যারিসে টেপ টেনিস ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত : চ্যাম্পিয়ন সিলেট ফাইটার্স প্যারিসে জুলাই বিপ্লবের কবিতাপাঠ ও আলোচনা সভা গুম-খুন, বর্বরতা তদন্তে জাতিসংঘ টিম ঢাকায়

ইত্যাদির সেই প্রতিবেদন ভাইরাল, প্রশংসায় ভাসছেন ডা. জেসন-মারিন্ডি দম্পত্তি

  • আপডেট সময় ০৮:৫৯:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ১৪৯ বার পড়া হয়েছে

মিনহাজ হোসেন ইতালী প্রতিনিধিঃ ডাক্তার ভাই এড্রিক বেকার টাঙ্গাইলের মধুপুরের কালিয়াকুড়িতে গরিবের জন্য হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন। বেকার মারা যাওয়ার পর দায়িত্ব নিয়েছেন আমেরিকান দম্পত্তি জেসন-মারিন্ডি।

শুক্রবার বিটিভিতে প্রচারিত হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এই দম্পত্তিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

দরিদ্র মানুষদের জন্য নিউজিল্যান্ডের চিকিৎসক এড্রিক বেকারের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের হাল ধরে প্রশংসায় ভাসছেন আমেরিকান এই দম্পত্তি।

টানা ৩২ বছর টাংগাইল জেলার মধুপুর উপজেলার কালিয়াকৈরে গ্রামের দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা দেয়ার পর মারা যান ডাক্তার ভাই হিসাবে পরিচিত ডাক্তার এড্রিক বেকার। দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলে অনেকেই চেয়েছিলেন- উনাকে ঢাকাতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দিতে। তিনি ঢাকা যাননি। তাঁর তৈরি করা হাসপাতালেই তিনি ২০১৫ সালে মারা যান।
মৃত্যুর পূর্বে তিনি চেয়েছিলেন- এই দেশের কোনো মানবতবাদী ডাক্তার যেন গ্রামে এসে তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের হাল ধরে। কিন্তু হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুসারে – এ দেশের একজন ডাক্তারও তাঁর সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

দেশের কেউ সাড়া না দিলেও তাঁর আহ্বানে সূদর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছেন- আরেক মানবতাবাদী ডাক্তার দম্পতি জেসিন এবং মেরিন্ডি। যে দেশে যাওয়ার জন্য দুনিয়ার সবাই পাগল। শুধু নিজেরা যে এসেছেন তা না। নিজেদের সন্তানদেরও সাথে করে নিয়ে এসেছেন। ভর্তি করে দিয়েছেন গ্রামেরই স্কুলে। গ্রামের শিশুদের সাথে খেলছে । ডাক্তার জেসিন কী সুন্দর করে লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

আমরা সুযোগ পেলেই গ্রাম থেকে শহরে ছুটি। শহর থেকে বিদেশ পাড়ি দেই। শিশু জন্মের পর থেকেই চিন্তা থাকে কত দ্রুত সন্তানকে আধুনিক মিডিয়াম ইংরেজি স্কুলে বাচ্চাকে পড়াবো। লুঙ্গি পরাতো আমাদের রুচির সাথে আজ বড়ই বেমানান। লুঙ্গি পরতে পারিনা বলতে পারলে- আমাদের আভিজাত্যের পারদ শুধু একটুকু না অনেকটুকুই বাড়ে। বনানী গুলশান পশ এলাকায় তো একবার লুঙ্গি পরাই নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো। কারণ- ওরা জানেনা- ওদের প্লেটে যে খাবার যায়- তা এদেশের লুঙ্গি গামছা পরা কৃষকরাই তোলে দেয়।

শিশুরা কত সুন্দর করে ইংরেজি বলতে পারে- বাবা মায়ের গর্বের শেষ নেই। একটা কবিতা তো আছে-সম্ভবত এরকম যেন লাইনগুলো-বাবা-মা খুব অহঙ্কার করে সন্তানদের নিয়ে বলছেন “জানেন মশাই, ওদের বাংলাটা ঠিক আসেনা”।

একবার বিদেশ পাড়ি জমাতে পারলেই – আমরা মাটি কামড় দিয়ে পড়ে থাকি। কোনো একটা লেখায় পড়লাম- বিদেশের এক শিক্ষক বাংলাদেশের এক অধ্যাপককে বলছেন- আপনাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে পড়ালেখা করে কি দেশে ফিরে যায়?
উনি লজ্জায় বললেন- বেশীর ভাগই যায় না।
অবাক হয়ে বিদেশী অধ্যাপক বললেন- যায়না কী বলেন। এটাতো ভারী অন্যায়। কারণ- জনগণের ট্যাক্সের টাকা সরকার তাদের শিক্ষার পিছনে ইনভেস্ট করলো। আর ভোগ করলো অন্য একটা দেশ।

অধ্যাপক বললেন ওদের কে দোষ দিয়েও লাভ নেই। কারণ- দেশে এসে উচিত কথা বলতে চাইলে ঘটে পদে পদে দূর্গতি। যেমন- উচিত কথা বলায় সম্প্রতি দারণ এক দূর্গতির শিকার হয়েছেন ঢাবি’র অর্থনীতির এক অধ্যাপক। কোর্ট থেকে রায় পেয়েও শরণার্থীর মতো নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন- ক্লাস নিতে পারছেন না।

দেশপ্রেম মাটি, মমতা, মানুষ ইত্যাদি নিয়ে আমরা কত কথাই বলি। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি- জাতীয় সংগীত। সোনার বাংলার প্রতি আমাদের ভালোবাসা কত বেশি- তা একবার ইউরোপ আমেরিকার এ্যাম্বেসীর সামনে দেখা গেলেই বুঝা যায়। কাকডাকা ভোর থেকেই বিদেশের স্বপ্নের আশায় মানুষের লাইন।

ইত্যাদির প্রতিবেদনটা দেখলাম। ডাঃ জেসন এবং মেরিণ্ডা দম্পত্তি আমাদের এক বিশাল লজ্জায় ফেলে দিলেন।

কেউ যদি না দেখে থাকেন, দেখার আমন্ত্রণ রইলো। গ্রামকে ভালোবাসুন, গ্রামের মানুষকে ভালোবাসতে চেষ্টা করুন। এক আমেরিকার সিটিজেন ডাক্তারের পক্ষে যদি সম্ভব হয়, তবে আমি-আপনি নই কেন?

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

পাথর ও মানুষ – শ্যামল বণিক অঞ্জন

ইত্যাদির সেই প্রতিবেদন ভাইরাল, প্রশংসায় ভাসছেন ডা. জেসন-মারিন্ডি দম্পত্তি

আপডেট সময় ০৮:৫৯:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

মিনহাজ হোসেন ইতালী প্রতিনিধিঃ ডাক্তার ভাই এড্রিক বেকার টাঙ্গাইলের মধুপুরের কালিয়াকুড়িতে গরিবের জন্য হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন। বেকার মারা যাওয়ার পর দায়িত্ব নিয়েছেন আমেরিকান দম্পত্তি জেসন-মারিন্ডি।

শুক্রবার বিটিভিতে প্রচারিত হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এই দম্পত্তিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

দরিদ্র মানুষদের জন্য নিউজিল্যান্ডের চিকিৎসক এড্রিক বেকারের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের হাল ধরে প্রশংসায় ভাসছেন আমেরিকান এই দম্পত্তি।

টানা ৩২ বছর টাংগাইল জেলার মধুপুর উপজেলার কালিয়াকৈরে গ্রামের দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা দেয়ার পর মারা যান ডাক্তার ভাই হিসাবে পরিচিত ডাক্তার এড্রিক বেকার। দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলে অনেকেই চেয়েছিলেন- উনাকে ঢাকাতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দিতে। তিনি ঢাকা যাননি। তাঁর তৈরি করা হাসপাতালেই তিনি ২০১৫ সালে মারা যান।
মৃত্যুর পূর্বে তিনি চেয়েছিলেন- এই দেশের কোনো মানবতবাদী ডাক্তার যেন গ্রামে এসে তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের হাল ধরে। কিন্তু হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুসারে – এ দেশের একজন ডাক্তারও তাঁর সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

দেশের কেউ সাড়া না দিলেও তাঁর আহ্বানে সূদর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছেন- আরেক মানবতাবাদী ডাক্তার দম্পতি জেসিন এবং মেরিন্ডি। যে দেশে যাওয়ার জন্য দুনিয়ার সবাই পাগল। শুধু নিজেরা যে এসেছেন তা না। নিজেদের সন্তানদেরও সাথে করে নিয়ে এসেছেন। ভর্তি করে দিয়েছেন গ্রামেরই স্কুলে। গ্রামের শিশুদের সাথে খেলছে । ডাক্তার জেসিন কী সুন্দর করে লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

আমরা সুযোগ পেলেই গ্রাম থেকে শহরে ছুটি। শহর থেকে বিদেশ পাড়ি দেই। শিশু জন্মের পর থেকেই চিন্তা থাকে কত দ্রুত সন্তানকে আধুনিক মিডিয়াম ইংরেজি স্কুলে বাচ্চাকে পড়াবো। লুঙ্গি পরাতো আমাদের রুচির সাথে আজ বড়ই বেমানান। লুঙ্গি পরতে পারিনা বলতে পারলে- আমাদের আভিজাত্যের পারদ শুধু একটুকু না অনেকটুকুই বাড়ে। বনানী গুলশান পশ এলাকায় তো একবার লুঙ্গি পরাই নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো। কারণ- ওরা জানেনা- ওদের প্লেটে যে খাবার যায়- তা এদেশের লুঙ্গি গামছা পরা কৃষকরাই তোলে দেয়।

শিশুরা কত সুন্দর করে ইংরেজি বলতে পারে- বাবা মায়ের গর্বের শেষ নেই। একটা কবিতা তো আছে-সম্ভবত এরকম যেন লাইনগুলো-বাবা-মা খুব অহঙ্কার করে সন্তানদের নিয়ে বলছেন “জানেন মশাই, ওদের বাংলাটা ঠিক আসেনা”।

একবার বিদেশ পাড়ি জমাতে পারলেই – আমরা মাটি কামড় দিয়ে পড়ে থাকি। কোনো একটা লেখায় পড়লাম- বিদেশের এক শিক্ষক বাংলাদেশের এক অধ্যাপককে বলছেন- আপনাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে পড়ালেখা করে কি দেশে ফিরে যায়?
উনি লজ্জায় বললেন- বেশীর ভাগই যায় না।
অবাক হয়ে বিদেশী অধ্যাপক বললেন- যায়না কী বলেন। এটাতো ভারী অন্যায়। কারণ- জনগণের ট্যাক্সের টাকা সরকার তাদের শিক্ষার পিছনে ইনভেস্ট করলো। আর ভোগ করলো অন্য একটা দেশ।

অধ্যাপক বললেন ওদের কে দোষ দিয়েও লাভ নেই। কারণ- দেশে এসে উচিত কথা বলতে চাইলে ঘটে পদে পদে দূর্গতি। যেমন- উচিত কথা বলায় সম্প্রতি দারণ এক দূর্গতির শিকার হয়েছেন ঢাবি’র অর্থনীতির এক অধ্যাপক। কোর্ট থেকে রায় পেয়েও শরণার্থীর মতো নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন- ক্লাস নিতে পারছেন না।

দেশপ্রেম মাটি, মমতা, মানুষ ইত্যাদি নিয়ে আমরা কত কথাই বলি। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি- জাতীয় সংগীত। সোনার বাংলার প্রতি আমাদের ভালোবাসা কত বেশি- তা একবার ইউরোপ আমেরিকার এ্যাম্বেসীর সামনে দেখা গেলেই বুঝা যায়। কাকডাকা ভোর থেকেই বিদেশের স্বপ্নের আশায় মানুষের লাইন।

ইত্যাদির প্রতিবেদনটা দেখলাম। ডাঃ জেসন এবং মেরিণ্ডা দম্পত্তি আমাদের এক বিশাল লজ্জায় ফেলে দিলেন।

কেউ যদি না দেখে থাকেন, দেখার আমন্ত্রণ রইলো। গ্রামকে ভালোবাসুন, গ্রামের মানুষকে ভালোবাসতে চেষ্টা করুন। এক আমেরিকার সিটিজেন ডাক্তারের পক্ষে যদি সম্ভব হয়, তবে আমি-আপনি নই কেন?