ব্রেক্সিটবিরোধী প্রচারণাকে উপজীব্য করে সোমবার যুক্তরাজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে নতুন রাজনৈতিক দল রিনিউ পার্টি। মূলত ২০১৭ সালের নির্বাচনে ব্রেক্সিটবিরোধী অবস্থানে থাকা একদল স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে দলটি গঠন করা হয়েছে।
রিনিউ পার্টি’র দাবি, এরইমধ্যে তারা এক হাজারেরও বেশি সমর্থক ও ৩০০ জনের বেশি প্রার্থী সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। দলটির স্লোগান ‘রিথিংক ব্রেক্সিট, রিনিউ ব্রিটেন।’ এই স্লোগান নিয়ে তারা পুরো দেশে গণসংযোগ করবে।
সোমবার থেকে রিনিউ পার্টি জাতীয় প্রচারাভিযান ও প্রার্থী পরিচিতি কার্যক্রম শুরু করেছে।
দলটির দাবি, তিন শতাধিক প্রার্থী বাছাইয়ের ফলে স্থানীয় বা জাতীয় যে কোনও নির্বাচনেই তারা প্রার্থী দিতে পারবে। এই বাছাই করা প্রার্থিরা ‘ব্রেক্সিট পুনর্বিবেচনা করে নতুন ব্রিটেন’ গড়ার আদর্শে কাজ করবেন।
রিনিউ পার্টির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মধ্যপন্থী আদর্শের কারণে রিনিউ বিপুল সমর্থন পেয়েছে। ইইউ-এর পূর্ণ সদস্য হলে যতটা শক্তিশালী হওয়া যায় ততটা শক্তি নিয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে চায় রিনিউ পার্টি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘রিনিউ ভবিষ্যতের সবগুলো নির্বাচনি আসনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ও ইইউতে থাকার জন্য প্রচারণা চালাতে ৬৫০ জন প্রার্থী নির্ধারণ করতে চায়।’
দলটির জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা সামনের মার্চে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় নির্বাচন। এরপর ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচন। দক্ষিণ লন্ডনের বাটের্সি থেকে ২০১৭ সালের জুনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাবেক হিসাবরক্ষক ক্রিস কোঘলান তার দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট বাতিল করা ও যুক্তরাজ্যকে ইউরোপের প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তার দল।
সাবেক সাংবাদিক, জাতিসংঘের সাবেক কর্মী ও রিনিউ পার্টির প্রধান তিন জনের একজন সান্দ্রা খাধৌরি। তিনি জানিয়েছেন, ‘ব্রেক্সিট গণভোট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বৈষম্য নিয়ে তীব্র অসন্তুষ্টির কারণে আমাদের জাতি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ইইউ ত্যাগ করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ব্রেক্সিটের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কেননা ব্রেক্সিট বিষয়ে আমরা নতুন করে অনেক কিছু জেনেছি।’
দলটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন জেমস টোরানস এবং জেমস ক্লার্ক। টোরানস একজন হিসাবরক্ষক ও বিপণন পেশাজীবী। অপরদিকে ক্লার্ক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তারা দুই জনই ব্রেক্সিটবিরোধী হিসেবে ২০১৭ সালের জুন মাসের নির্বাচনে লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন, যাতে ব্রেক্সিটপন্থী প্রার্থীদের ভোট কাটা যায়।
‘লিসেন টু ব্রিটেন’ শীর্ষক প্রচারাভিযানের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,‘আমরা সারাদেশে গণসংযোগ করবো। আমাদের শহর, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সক্ষমতাকে নতুন করে গড়ে তুলতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানতে ও ব্রিটেনের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিশ্চিত করতেই এটা করা হবে।’
যুক্তরাজ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্রেক্সিটবিরোধী কয়েকটি প্রচারাভিযানে দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ রাখা বা না রাখার বিষয়ে তারা আবারও গণভোট দাবি করছে। এ বছরের শেষদিকে পার্লামেন্টে বিষয়টি উত্থাপিত হলে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন চুক্তির বিরোধিতা করার জন্য এমপিদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে।
ব্রেক্সিটবিরোধী সংগঠক জিনা মিলারের ‘বেস্ট ফর ব্রিটেন’ এবং যুব সংগঠন ‘আওয়ার ফিউচার, আওয়ার চয়েস’সহ এমন আরও কিছু সংগঠন ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া আটকাতে চায়।
রিনিউ পাটি’র দাবি, ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটে পরাজয়ের মূল কারণ, ৫২ শতাংশ ব্রেক্সিটপন্থী ব্রিটিশ নাগরিক। ফলে এবার তারাই দলটির যুক্তরাজ্যজুড়ে প্রচারাভিযান পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।
রিনিউ পার্টি বলছে, তারা ‘আভিবাসন ব্যবস্থাপনার জন্য আরও কার্যকর পথ অনুসন্ধান করবে’-গণভোটে ব্রেক্সিটের জয়ের পেছনে যা মূল ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন অনেকে।