বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হওয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার হংসবলাকার যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ সোমবার। এর মাধ্যমে দেশের বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা হলো ১৫টি।
আজ সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে প্রথম যাত্রা শুরু করবে ড্রিমলাইনার বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের অত্যাধুনিক এই উড়োজাহাজ। বিমান সূত্র জানায়, আজ থেকে ২৭১ আসনের ড্রিমলাইনারে ঢাকা-লন্ডন রুটে সপ্তাহে ৬টি, ঢাকা-দাম্মাম রুটে সপ্তাহে ৪টি এবং ঢাকা-ব্যাংকক রুটে সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, ড্রিমলাইনার ঘণ্টায় ৬৫০ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম। উড়োজাহাজের শব্দ কমাতে ইঞ্জিনের সঙ্গে শেভরন প্রযুক্তি যুক্ত রয়েছে। বিমানটি ইলেকট্রিক ফ্লাইট সিস্টেমে নিয়ন্ত্রিত। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় ড্রিমলাইনারের বিমান ওজনে হালকা। ভূমি থেকে বিমানটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। দুটি পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট। এর মোট ওজন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৭ কিলোগ্রাম, যা ২৯টি হাতির সমান! এর ককপিট থেকে টেল (লেজ) পর্যন্ত ২৩ লাখ যন্ত্রাংশ রয়েছে।
ড্রিমলাইনারে ২৭১টি আসনের মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরামদায়কভাবে বিশ্রাম নিতে পারবেন। ড্রিমলাইনারে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় যাত্রীরা ওয়াই-ফাই সুবিধা পাবেন। এছাড়াও এতে যাত্রীরা আকাশে উড্ডয়নকালীন ফোন কল করতে পারবেন।
ড্রিমলাইনানের প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডিএস-মনিটর রয়েছে। মনিটরে বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। একইসঙ্গে ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে ১০০টির বেশি ক্ল্যাসিক থেকে ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র।
এতে রয়েছে বিমানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত গেমস। অত্যাধুনিক উড়োজাহাজটি যে স্থানের ওপর দিয়ে যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রিডি ম্যাপ। একইসঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
ড্রিমলাইনারের দু’পাশের প্রত্যেক আসনের পাশে রয়েছে বড় আকারের জানালা। একইসঙ্গে জানালার শাটার বন্ধ করা ও খোলা যাবে বোতাম টিপে। জানালা থেকে শুরু করে কেবিনেও রয়েছে মুড লাইট সিস্টেম। এতে যাত্রীরা সহজেই পরিবর্তন করতে পারবেন লাইটিং মুড। দীর্ঘ সময় ভ্রমণেও যাত্রীরা যেন ক্লান্তি অনুভব না করেন সেজন্য এর ভেতরে এয়ার কম্প্রেসার সিস্টেম অন্যান্য উড়োজাহাজের তুলনায় উন্নত।
ড্রিমলাইনারের ককপিটেও রয়েছে নতুনত্ব। সেখানে থাকছে হেডআপ ডিসপ্লে। এর মাধ্যমে চোখের সামনের প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে পারবেন পাইলটরা। সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে তারা যুক্ত থাকবেন। এর মাধ্যমে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, ককপিট, ফুয়েল, নেভিগিয়েশনসহ সব তথ্য জানতে পারবেন ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা। যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা অপারেশন রুম থেকে পাইলটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবেন।
গত ৫ ডিসেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে যুক্ত হওয়া বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ‘হংসবলাকা’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন দুপুরে হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে ফিতা কেটে ‘হংসবলাকা’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন তিনি।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট বিমানের প্রথম ড্রিমলাইনার আকাশবীণা ঢাকায় আসে। বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ‘গাঙচিল’ ও ‘রাজহংস’ নামের আরও দুটি ড্রিমলাইনার ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আসবে বলে বিমানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিমান সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০০৮ সালে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির ১০টি নতুন বিমান ক্রয়ের জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের চুক্তি করে। এরইমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে ৬টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, ২টি ৭৩৭-৮০০ এবং ১টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। কাল নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি ড্রিমলাইনার ‘হংসবলাকা’।
সর্বশেষ সংবাদ
আজ উড়ছে হংসবলাকা
ট্যাগস :