নীল হলে ছেলে, গোলাপি হলে মেয়ে! ঘরে বসেই ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ চলছে।
১৯৯৪ সালের ‘প্রিকনসেপশন অ্যান্ড প্রিনেটাল ডায়গনস্টিক টেকনিকস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, দেশে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি। কিন্তু একাধিক অনলাইন ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে এ দেশে ‘জেন্ডার মেকার’ নামে লিঙ্গনির্ধারক যন্ত্র দেদার বিকোচ্ছে! দাম এক হাজার থেকে ছ’হাজার টাকা। সঙ্গে শিপিং চার্জ হিসাবে দিতে হচ্ছে ৫ থেকে ১৫ ডলার।
ই-কমার্স সাইটের দাবি অনুযায়ী, গর্ভসঞ্চারের ছয় সপ্তাহ পরে অন্তঃসত্ত্বার সকালের প্রথম মূত্রের নমুনা ওই যন্ত্রে রাখতে হবে। এরপর ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই ফল জানা যাবে।
‘জেন্ডার মেকার’ সঠিকভাবে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কলকাতা মেডিকেল কলেজের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ তপন নস্কর বলেন, ‘‘আদৌ এভাবে লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব কি না, তা দেখতে হবে। কিন্তু যারা যন্ত্র কিনছেন, তারা তো ভ্রূণের লিঙ্গ কী, সেটাই জানতে আগ্রহী। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী লিঙ্গ নির্ধারণের চেষ্টা করা যায় না।’’
ক্রেতাদের কেউ কেউ রিভিউয়ে লিখেছেন, যন্ত্রটি ভ্রূণের সঠিক লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পেরেছে। আবার অনেকেই ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশের ‘টেক-স্যাভি’ প্রজন্মের অনেকেই এই যন্ত্রের অর্ডার দেয়ায় হতবাক সমাজকর্মীদের একাংশ।
রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি! আগে মেয়েদের অবাঞ্ছিত বলে মনে করা হতো। দেখা যাচ্ছে, এখনও সেই মানসিকতা যথেষ্ট প্রভাবশালী। না হলে আইনগত নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কেউ এমন যন্ত্রের অর্ডার দিতেন না। এই যন্ত্র যাতে ভারতে বিক্রি হতে না পারে, তা নিশ্চিত করুক কেন্দ্র।
রাজ্যের নারী কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপারসন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের বলেন, যারা ইন্টারনেটে এই যন্ত্র কিনছেন, তারা আলোকপ্রাপ্ত অংশেরই মানুষ! এই যন্ত্রে লিঙ্গ নির্ণয় হয় কি না, তার চেয়েও জরুরি পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতাকে চিহ্নিত করা। নানা উপায়ে বেআইনিভাবে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ চলছে। কন্যাসন্তানের সংখ্যা ক্রমশ কমছে।
প্রসঙ্গত, ভারতে নিষিদ্ধ হলেও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি নয়। নামী ই-কমার্স সাইটগুলো ওই দেশে বিক্রি করলেও ভারতে ওই যন্ত্র বিক্রি করে না। সূত্রের খবর, একাধিক অনামী ই-কমার্স সাইট আমেরিকা, ব্রিটেন এবং চীন থেকে ওই যন্ত্র এ দেশে পাঠাচ্ছে।