ঢাকা ০১:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
পোস্টাল ব্যালটে ভোট ও ইসির অ্যাপ্স “পোস্টাল ভোটে বিডি” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বদের জন্য ফরাসি ভাষা ও নাগরিক শিক্ষা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পর্তুগাল-বাংলাদেশ কমিউনিটির আয়োজনে আনন্দ ভ্রমণ কারাদণ্ড কার্যকরের আগে এলিসি প্রাসাদে পূর্বসূরি সারকোজিকে আমন্ত্রণ জানালেন ম্যাক্রোঁ লুভর জাদুঘরে দুঃসাহসিক ডাকাতি: ফ্রান্সে দোষারোপের রাজনীতি তুঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত প্যারিস ল্যুভর জাদুঘরে চুরি ফ্রান্সে “আশা এবং আমার সংগ্রাম” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা দেড় হাজারের বেশি মানুষের অংশগ্রহনে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো ১২তম মুসলিম চ্যারিটি রান বিগত ১১৭ বছরের সব দলিল অনলাইনে যাচ্ছে, ভূমি মালিকদের করণীয় তরুণদের বিদেশমুখিতা: সুযোগ না সংকট? ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য এক সতর্কবার্তা”

ফ্রান্সে ভয়াবহ আবাসন সংকট – বাংলাদেশি প্রবাসীদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

  • আপডেট সময় ০২:৩৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
  • ১৩৬ বার পড়া হয়েছে

উবায়দ উল্লাহ কয়েস : ফ্রান্সে বর্তমানে একটি গুরুতর আবাসন সংকট চলছে, যার প্রভাব পড়ছে হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীর উপর। ভাড়া বৃদ্ধি, বাড়ির স্বল্পতা, এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে অনেকেই বাসার জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন। এই সংকটের ফলে একাধিক ব্যক্তি মিলে একটি ছোট বাসায় থাকা এখন যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে – কিন্তু আইনের চোখে এটি এক ধরনের অপরাধ।

গৃহসংকটের মূল কারণ বাড়ি ভাড়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি,প্যারিস ও তার আশেপাশের এলাকায় গত এক বছরে বাড়ি ভাড়া গড়ে ১০% পর্যন্ত বেড়েছে। একটি সাধারণ ২ কক্ষের বাসার ভাড়া এখন ১২০০-১৫০০ ইউরো পর্যন্ত গিয়েছে।

পাশাপাশি সরকারি ও সামাজিক বাসা বা “HLM”-এর তালিকায় একেকজনকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত।বাংলাদেশি প্রবাসীদের অনেকেই বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের সঙ্গে মিলে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। অনেক সময় ৬-৭জন একসাথে একটি বাসায় থাকছেন যেখানে মাত্র ২ জনের থাকার অনুমতি রয়েছে। এই অবস্থাকে ফ্রান্সের আইন বলে sur-occupation বা অতিরিক্ত দখল।

ফ্রান্সে হাউজিং কোড অনুযায়ী, প্রতি ব্যক্তির জন্য কমপক্ষে ৯ বর্গমিটার জায়গা থাকতে হবে। একাধিকজন যদি ছোট ঘরে থাকেন, তবে তা আইনি অপরাধ বলে বিবেচিত হয় এবং বাসা মালিক বা ভাড়াটিয়া – উভয়কেই জরিমানা ও উচ্ছেদের মুখোমুখি হতে হয়।

সম্প্রতি প্যারিসের Aubervilliers, Saint-Denis,sarcelles এবং La Courneuve এলাকায় পুলিশ ও শহর প্রশাসন যৌথ অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বাসা থেকে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও আফ্রিকান অভিবাসীদের উচ্ছেদ করেছে। অভিযোগ ছিল, এক কামরার বাসায় ৫-৬ জন একসাথে থাকতেন, কিছু ক্ষেত্রে বিছানাও ভাগাভাগি করতেন। কিছু বাসায় বাথরুম ও রান্নাঘরও সবাই ভাগ করে ব্যবহার করতেন – যা স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে।

একজন ভুক্তভোগী যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, যিনি প্যারিসে Uber চালান, তিনি বলেন –“আমরা কয়েকজন মিলে একটি স্টুডিও বাসায় থাকি। সবাই কাজ করি, দিনভর বাইরে থাকি। তবুও আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেছে। এখন বাসার মালিক বলেছে আমাদের বের হয়ে যেতে হবে।আমাদের মতো অনেকেই এ ধরণের সমস্যায় আছেন।আমাদের বাধ্য হয়ে অনেকজন মিলে থাকতে হয়।ফ্রান্সে সরকার যদি বাসার বিষয় সহজ করতো তাহলে আমরা এ ধরনের বাসায় অথবা এমন পরিবেশে থাকতাম না।

অনেক বাড়িওয়ালা জেনেশুনেই বেশি ভাড়ার লোভে ১ জনের জায়গায় ৪ জনকে থাকতে দেন। ফ্রান্সে এটিকে marchands de sommeil বা ঘুমের ব্যবসায়ী” বলা হয়। এ ধরনের বাড়িওয়ালারা আইনের আওতায় এলেই তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।ফরাসি সরকার এই সংকট সমাধানে চেষ্টা করছে, তবে তা যথেষ্ট নয় বলে অনেকের অভিযোগ। কিছু সামাজিক সংগঠন দাবি তুলেছে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ আবাসন সুবিধা দেওয়ার। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অভিবাসন বিরোধী মতবাদের কারণে তা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ছে।

ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য গৃহসংকট এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনের সীমাবদ্ধতা, ভাড়ার উচ্চতা ও ঘরের অভাব – সব মিলে প্রতিদিনকার জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। এ অবস্থায় সবাইকে সচেতন থেকে আইন মেনে চলা এবং সম্ভব হলে স্থানীয় সংগঠন ও দূতাবাসের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
লেখক
উবায়দুল্লাহ কয়েছ
প্রেসিডেন্ট
আইছা
প্যারিস

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

পোস্টাল ব্যালটে ভোট ও ইসির অ্যাপ্স “পোস্টাল ভোটে বিডি” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ফ্রান্সে ভয়াবহ আবাসন সংকট – বাংলাদেশি প্রবাসীদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

আপডেট সময় ০২:৩৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

উবায়দ উল্লাহ কয়েস : ফ্রান্সে বর্তমানে একটি গুরুতর আবাসন সংকট চলছে, যার প্রভাব পড়ছে হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীর উপর। ভাড়া বৃদ্ধি, বাড়ির স্বল্পতা, এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে অনেকেই বাসার জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন। এই সংকটের ফলে একাধিক ব্যক্তি মিলে একটি ছোট বাসায় থাকা এখন যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে – কিন্তু আইনের চোখে এটি এক ধরনের অপরাধ।

গৃহসংকটের মূল কারণ বাড়ি ভাড়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি,প্যারিস ও তার আশেপাশের এলাকায় গত এক বছরে বাড়ি ভাড়া গড়ে ১০% পর্যন্ত বেড়েছে। একটি সাধারণ ২ কক্ষের বাসার ভাড়া এখন ১২০০-১৫০০ ইউরো পর্যন্ত গিয়েছে।

পাশাপাশি সরকারি ও সামাজিক বাসা বা “HLM”-এর তালিকায় একেকজনকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত।বাংলাদেশি প্রবাসীদের অনেকেই বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের সঙ্গে মিলে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। অনেক সময় ৬-৭জন একসাথে একটি বাসায় থাকছেন যেখানে মাত্র ২ জনের থাকার অনুমতি রয়েছে। এই অবস্থাকে ফ্রান্সের আইন বলে sur-occupation বা অতিরিক্ত দখল।

ফ্রান্সে হাউজিং কোড অনুযায়ী, প্রতি ব্যক্তির জন্য কমপক্ষে ৯ বর্গমিটার জায়গা থাকতে হবে। একাধিকজন যদি ছোট ঘরে থাকেন, তবে তা আইনি অপরাধ বলে বিবেচিত হয় এবং বাসা মালিক বা ভাড়াটিয়া – উভয়কেই জরিমানা ও উচ্ছেদের মুখোমুখি হতে হয়।

সম্প্রতি প্যারিসের Aubervilliers, Saint-Denis,sarcelles এবং La Courneuve এলাকায় পুলিশ ও শহর প্রশাসন যৌথ অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বাসা থেকে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও আফ্রিকান অভিবাসীদের উচ্ছেদ করেছে। অভিযোগ ছিল, এক কামরার বাসায় ৫-৬ জন একসাথে থাকতেন, কিছু ক্ষেত্রে বিছানাও ভাগাভাগি করতেন। কিছু বাসায় বাথরুম ও রান্নাঘরও সবাই ভাগ করে ব্যবহার করতেন – যা স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে।

একজন ভুক্তভোগী যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, যিনি প্যারিসে Uber চালান, তিনি বলেন –“আমরা কয়েকজন মিলে একটি স্টুডিও বাসায় থাকি। সবাই কাজ করি, দিনভর বাইরে থাকি। তবুও আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেছে। এখন বাসার মালিক বলেছে আমাদের বের হয়ে যেতে হবে।আমাদের মতো অনেকেই এ ধরণের সমস্যায় আছেন।আমাদের বাধ্য হয়ে অনেকজন মিলে থাকতে হয়।ফ্রান্সে সরকার যদি বাসার বিষয় সহজ করতো তাহলে আমরা এ ধরনের বাসায় অথবা এমন পরিবেশে থাকতাম না।

অনেক বাড়িওয়ালা জেনেশুনেই বেশি ভাড়ার লোভে ১ জনের জায়গায় ৪ জনকে থাকতে দেন। ফ্রান্সে এটিকে marchands de sommeil বা ঘুমের ব্যবসায়ী” বলা হয়। এ ধরনের বাড়িওয়ালারা আইনের আওতায় এলেই তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।ফরাসি সরকার এই সংকট সমাধানে চেষ্টা করছে, তবে তা যথেষ্ট নয় বলে অনেকের অভিযোগ। কিছু সামাজিক সংগঠন দাবি তুলেছে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ আবাসন সুবিধা দেওয়ার। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অভিবাসন বিরোধী মতবাদের কারণে তা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ছে।

ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য গৃহসংকট এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনের সীমাবদ্ধতা, ভাড়ার উচ্চতা ও ঘরের অভাব – সব মিলে প্রতিদিনকার জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। এ অবস্থায় সবাইকে সচেতন থেকে আইন মেনে চলা এবং সম্ভব হলে স্থানীয় সংগঠন ও দূতাবাসের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
লেখক
উবায়দুল্লাহ কয়েছ
প্রেসিডেন্ট
আইছা
প্যারিস