ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নাগরিক ও অ-ইউরোপীয় নাগরিকদের জন্য বিদ্যমান অভিবাসন আইন একীভূত করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রথমবারের মতো এমন এই ইঙ্গিত দেন মে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য ইইউ’র অবাধ চলাফেরার আইনের আওতায় রয়েছে। এর ফলে ইইউভুক্ত ২৭টি দেশের নাগরিকরা চাইলেই অবাধে যুক্তরাজ্যে কাজ করতে পারেন এমনকি স্থায়ীও হতে পারেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো অ-ইউরোপীয় দেশের নাগরিকদের দেশটিতে ঢোকার জন্য কঠোর ভিসা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
বিবিসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে থেরেসা মে বলেন, ২০১৬ সালের জুনে ব্রেক্সিট গণভোটে ভোটাররা অভিবাসন ক্ষেত্রে এই দ্বৈত ব্যবস্থা শেষ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ জনগণের ওই বার্তা খুবই সহজ। তারা আর এমন কোনও পরিস্থিতি চায় না যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা লোকজন যুক্তরাজ্যে প্রবেশের স্বয়ংক্রিয় অধিকার পেয়ে যাবে আর বাইরের লোকজনের জন্য একগুচ্ছ নিয়ম থাকবে।’ মে বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক ও এর বাইরের নাগরিকদের জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম চালু করা জন্য কাজ করবো।’
কিছুদিনের মধ্যেই যুক্তরাজ্য সরকার বিস্তারিত অভিবাসন প্রস্তাব প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এতে কনজারভেটিভ পার্টির অন্যতম লক্ষ্য যুক্তরাজ্য থেকে অভিবাসী কমানোর বিষয়টি মাথায় রাখা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এজন্য অভিবাসীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। এছাড়া ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্যে ইইউ অভিবাসীদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়টিও নাকচ করে দিয়েছেন থেরেসা মে। তবে এই বিষয়ে তার নিজ দলের এমপি ও মন্ত্রীদের মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে।
ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচারণাকারীরাও ইইউ ও এর বাইরের অভিবাসীদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির ওপর বেশি জোর দিয়েছিলেন। ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচারণাকারী সাবেক ব্রিটিশ কেবিনেট মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের ভোট আদায়ের জন্য বিষয়টি সামনে এনেছিলেন। তিনি বাংলাদেশিদের তরকারি ও আচার শিল্পে এই বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তরকারি যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগের পছন্দের খাবার। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে খুব কম রাঁধুনিই যুক্তরাজ্যে এসে তরকারি রান্না করতে পারে আর পরবর্তী প্রজন্মের রাঁধুনিদের শেখাতে পারে।’ যুক্তরাজ্যে তরকারি ও আচার শিল্পে ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। এখানে এই শিল্পের ৩০০ কোটি পাউন্ডের ব্যবসা রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ভোট দেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের সীমান্ত ও অভিবাসন নীতির ওপর নিয়ন্ত্রন ফিরে পেতে পারি।’ তবে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দেওয়ার পরও অবস্থার তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। তাই যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি তরকারি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিয়ে বেশ হতাশায় রয়েছেন।
বাংলাদেশের সিলেট থেকে আসা যুক্তরাজ্যের শীর্ষ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ও ‘বার্ষিক ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড’র প্রবর্তক এনাম আলী বলেন, ‘কর্মী সংকটের কারণে আমাদের অনেকেই ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারছি না। তাই আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে ব্যবসা বাড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’ এই খাতে দক্ষ রাঁধুনির সংকট মেটানোর জন্য তিনি নর্থ ইস্ট সারে কলেজ অব টেকনোলজির সহযোগিতায় লি রাজ একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করতে যাচ্ছেন। এখানে পরবর্তী প্রজন্মের রাঁধুনীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে কর্মী সংকট দূর হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার ৬ মাস আগে থেরেসা মে অভিবাসন বিষয়ে প্রথমবারের মতো এমন মন্তব্য করলেন। কিছুদিনের মধ্যে যুক্তরাজ্যের নতুন ভিসা’র নির্দেশনা প্রকাশ করা হবে। থেরেসা মে’র বক্তব্যের পর আশা করা হচ্ছে তাতে ইউরোপীয় ও অ-ইউরোপীয় অভিবাসীদের সমানভাবে মূল্যায়ন করা হবে।