ব্রেক্সিট পরবর্তী কঠোরতর অভিবাসন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এ পরিকল্পনা উন্মোচন করেন। এতে তিনি ব্রেক্সিট পরবর্তী অভিবাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার করেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যের মাটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের জন্য বাড়তি সুবিধার বদলে তিনি সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে চান। এমন চিন্তা থেকেই নতুন এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর যেসব নাগরিক যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন, নতুন এ ব্যবস্থা তাদের সুফল দেবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে এ ব্যবস্থায় স্বল্প দক্ষ অভিবাসীর বদলে দক্ষ অভিবাসীদের ওপর জোর দেওয়া হবে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদার পরিবারগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে এটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এক বিবৃতিতে থেরেসা মে বলেন, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করবো তখন আমরা নতুন একটি অভিবাসন ব্যবস্থা নিয়ে আসবো। কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো এমন একটি পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছে যেখানে এই দেশে আমরা কাদের প্রত্যাশা করি সেটা আমরাই নিয়ন্ত্রণ করবো। এটি হবে কর্মীদের জন্য একটি দক্ষতাভিত্তিক ব্যবস্থা। এখানে লোকজনের দক্ষতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তারা কোন দেশ থেকে এসেছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা পুরো দুনিয়ার দক্ষ জনশক্তিকে আকৃষ্ট করবে।
এর আগে বিবিসি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে থেরেসা মে বলেন, ব্রেক্সিটের পর সবার জন্য একই অভিবাসন আইন করবে যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নাগরিক ও অ-ইউরোপীয় নাগরিকদের জন্য বিদ্যমান অভিবাসন আইন একীভূত করা হবে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য ইইউ’র অবাধ চলাফেরার আইনের আওতায় রয়েছে। এর ফলে ইইউভুক্ত ২৭টি দেশের নাগরিকরা চাইলেই অবাধে যুক্তরাজ্যে কাজ করতে পারেন এমনকি স্থায়ীও হতে পারেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো অ-ইউরোপীয় দেশের নাগরিকদের দেশটিতে প্রবেশের জন্য কঠোর ভিসা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
থেরেসা মে বলেন, ২০১৬ সালের জুনে ব্রেক্সিট গণভোটে ভোটাররা অভিবাসনের ক্ষেত্রে এই দ্বৈত ব্যবস্থা শেষ করার পক্ষে রায় দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ জনগণের ওই বার্তা ছিল খুবই সহজ। তারা আর এমন কোনও পরিস্থিতি চায় না যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা লোকজন যুক্তরাজ্যে প্রবেশের স্বয়ংক্রিয় অধিকার পেয়ে যাবে। আবার বাইরের লোকজনের জন্য একগাদা নিয়ম থাকবে।’
থেরেসা মে বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক ও এর বাইরের নাগরিকদের জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম চালু করা জন্য কাজ করবো।’
ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচারণাকারীরাও ইইউ ও এর বাইরের অভিবাসীদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির ওপর বেশি জোর দিয়েছিলেন। ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচারণাকারী সাবেক ব্রিটিশ কেবিনেট মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের ভোট আদায়ের জন্য বিষয়টি সামনে এনেছিলেন। তিনি বাংলাদেশিদের তরকারি ও আচার শিল্পে এই বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশি কারি যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগের পছন্দের খাবার। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে খুব কম রাঁধুনিই যুক্তরাজ্যে এসে এটি রান্না করে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের রাঁধুনিদের শেখাতে পারে।’
যুক্তরাজ্যে কারি শিল্পে ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। এখানে এই শিল্পের ৩০০ কোটি পাউন্ডের ব্যবসা রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ভোট দেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের সীমান্ত ও অভিবাসন নীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারি।’