ইউরোপের দেশ ইতালিতে করোনা ভাইরাসে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার স্বাস্থ্যসেবা দফতরের সূত্রে এ খবর জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এএনএসএ। এ নিয়ে দেশটিতে এ ভাইরাসে দ্বিতীয় রোগীর মৃত্যু হলো। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যেই অন্তত ৩০ জনের শরীরে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা দ্বিতীয় ব্যক্তি মিলানের লোম্বার্ডি এলাকার বাসিন্দা। এর আগে ভেনেতো এলাকায় এ ভাইরাসে ৭৮ বছরেরর এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিলানের ওই নারীর মৃত্যুর খবর আসে।
মিলানের লোম্বার্ডি এলাকাকে ইতালির অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। আর এখানেই সর্বোচ্চ ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছে।
করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ইতোমধ্যেই উত্তরাঞ্চলীয় ১০টি শহরে জনসমাগমস্থল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর আওতায় স্কুল, সরকারি ভবন, রেস্টুরেন্ট ও কফি শপের মতো স্থানগুলো; যেখানে জনসমাগম ঘটে সেগুলো বন্ধ থাকবে। ইতালিতে সম্প্রতি এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি কখনও চীনে যাননি। ফলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শুক্রবার অঞ্চলটির জনসমাগমস্থল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নতুন করে আক্রান্ত ১৪ জনের সবাই লোম্বার্ডি এলাকার বাসিন্দা। সেখানে জানুয়ারির শেষ দিকে চীন থেকে ফেরা এক ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠকের পর ৩৮ বছরের আরেক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ওই ব্যক্তি যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন সেখানকার পাঁচ চিকিৎসক ও নার্স এবং অন্য বেশ কয়েকজন রোগীও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ওই এলাকার একটি ক্যাফেতে যাওয়া তিন ব্যক্তির শরীরেও এ ভাইরাসের সন্ধান মিলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নড়েচেড়ে বসে প্রশাসন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তাদের পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক সপ্তাহের জন্য যাবতীয় উৎসব পালন কিংবা গির্জা বা খেলাধূলায় অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সঙ্গে চীনের দৃশ্যমান কোনও সংযোগ না থাকার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থার প্রধান ড. তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেছেন, ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানোর সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসছে।
ড. তেদ্রোস বলেছেন, চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা কম। কিন্তু যেভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে তা উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, চীনে ভ্রমণ বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শের মতো স্পষ্ট মহামারীর সংযোগ না থাকার কারণে বিভিন্ন দেশে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
তিনি মনে করেন, চীনসহ অপর দেশগুলো যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে এখনও ভাইরাসটির আরও বেশি ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি সম্ভাব্য মহামারী ঠেকাতে আরও বেশি প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা কমে যাওয়া ও করোনা ভাইরাসে নতুন রোগী আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ইরান ও অন্যান্য দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চীন ছাড়া বিশ্বের অন্তত ২৭টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৮ জনের।
চীনে সরকারি হিসাবে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৫। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৮৮। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি যা সরকারি হিসাবে উঠে আসছে না। সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা।