ঢাকা ০৫:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
স্বদেশ গমন উপলক্ষে আবু বক্করকে সংবর্ধনা প্রদান ২১আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান খালাস পাওয়ায় ফ্রান্সে যুবদলের আনন্দ উৎসব বালাগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন : মাঠে মাঠে বাতাসে দুলছে ধানের শীষ “Dead” একটি শব্দ ও অচল প্রায় জীবন চাকা! আননূর মাদরাসার পক্ষ থেকে হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু-কে মেলবন্ধন স্মারক প্রদান বালাগঞ্জে উপজেলা প্রেসক্লাবের সাথে “নবাগত ইউএনও সুজিত কুমার চন্দ’র মতবিনিময় বালাগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের ‘হাতের মুঠোয় সকল সেবা’ কার্যক্রম চালু বিমানের প্যারিস-ঢাকা ফ্লাইট পুনরায় চালুর জোরালো দাবী প্রবাসীদের বালাগঞ্জে ছাত্রদল নেতা সায়েম আহমদ হত্যা মামলার অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা খলকু মিয়া আটক

ফ্রান্সে মুসলিম ঐতিহ্যের নিরব সাক্ষী (হপিটাল আভিন্সান) ইবনে সিনা হাসপাতাল

  • আপডেট সময় ১০:২২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ৩২৪ বার পড়া হয়েছে

বদরুল ইসলাম বিন হারুন- দীর্ঘদিন বাঘের বাচ্চাদেরকে খাচায় বন্ধীকরে পিঠে চালকের ঘা দিয়ে প্রশিক্ষিত করে লালন পালনের মাধ্যমে তাকে তার চৌদ্দগুষ্টির নাম ভুলিয়ে দেয়া সম্ভব।এর ফলে এক সময় শিশুরা তার উপর ছুয়ার হয়।তাকে নিয়ে খেলতামাশায় মেতে ওঠে।এদিকে বেচারা তার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে নিজেকে এক সময় গাধার প্রজাতি হিসেবে তার নিয়তি মেনে নেয়।

শিক্ষা দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া মুসলিম জাতি তাদের বাপ দাদার আসল ইতিহাস ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে সিংহ শাবকরা আজ নিজেদেকে গাধা ভাবছে ।তারা এখন নিজ দেশেও পরবাসী ।

কথা বলছি একটি ঐতিহাসিক হসপিটাল নিয়ে। মুসলিম ইতিহাসের এক মিনার যা ফ্রান্সের মুসলমানদের এক গৌরবোজ্জল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে যুগের পর যুগ।আজ আত্মভুলা কয়জন মুসলমান তার খবর রাখি।

ফ্রান্স কেন মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

ফ্রান্সের সাথে পশ্চিম আরব ও আফ্রিকার সম্পর্ক রয়েছে দীর্ঘ দিনর। আফ্রিকায় ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে লক্ষ লক্ষ আফ্রো-আরব মুসলিম ফ্রান্সের পক্ষে যুদ্ধ করে জীবন দেন ।।তাদের এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবদানের স্বীকৃতির জন্য প্রতিষ্ঠা করে ববিনীতে অবস্থিত কালের সাক্ষী ইবনে সিনা হসপিটাল।

hôpital avisenen বা ইবনে সিনা হসপিটাল

১৯৩৫ সালে প্যারিস বড় মসজিদের দশ বছর পর উত্তর আফ্রিকান ইমিগ্র্যান্টদের ত্যাগ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুসলমানদের অবদানের স্বীকৃতির প্রতিক হিসেবে (Hôpital franco-musulman de Paris) ফরাসী সরকার প্রদান করেছিলো।এই হসপিটালটি আজ ফ্রান্সের একটি গৌরবময় হসপিটাল এবং ঐতিহাসিক স্থান।
১৯৭৮ সালে হসপিটালটির নাম পরিবর্তন করে ঐতিহাসিক ইবনে সীনার নামে নাম করণ করা হয়।(ইনসাক্লোপিডডিয়া বৃটানিকা hôpital avicenne de paris 2016)

এই উদ্বোধনের প্রত্যক্ষ বর্ধন হিসাবে, আলজিয়ার্সের একজন ডাক্তার, আমাদি লাফোঁট, প্রকাশ্যভাবে প্যারিস অঞ্চলে মুসলমানদের, একটি হাসপাতালের ধারণা চালু করেছিলেন। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় এভাবে একটি ” কমিটি” গঠন করা হয়েছিল [

প্রকল্পটি আন্ড্রে-পিয়েরি গডিন (১৯৫৪) প্যারিসের পৌর কাউন্সিলর এবং আলজেরিয়ার প্রাক্তন উপনিবেশিক প্রশাসক দ্বারা পরিচালিত হয়। তিনি উত্তর আফ্রিকান নেটিভদের নজরদারি ও সুরক্ষার জন্য এই সার্ভিসের প্রতিষ্ঠা। প্যারিস অঞ্চলের কারখানায় ভাড়া নেওয়া এবং আরব ও বারবার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার উপর নজরদারি করা।
গডিনের চিন্তা ছিলো-এই হসপিটাল দ্বারা এক দিকে জনসংখ্যার স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা সাথে মুসলমানদের স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যায়ভার নিজ ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া যাবে।নিয়ন্ত্রণ থাকবে নিজ হাতে।হসপিটালটি একটি পুলিশি নজরদারির আওতাভুক্ত থাকবে। ১৯৩০ পর্যন্ত এই হসপিটালটি একটি দ্বিমুখী সুবিধা নীতির আওতায় পরিচালিত ছিলো।

স্বাস্থ্য এবং পুলিশি নজরদারি।

কমিউনিস্ট মেয়র ও স্থানীয়দের তুমুল বাদার মুখে এই হসপিটালটি ববিনীর মুসলিম কবরিস্থানের একটি সস্তা জমিতে স্থাপিত হয়।

৯৩৫ সালের ২২ মার্চ প্যারিসের ফ্রাঙ্কো-মুসলিম হাসপাতালের নামে এই হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছিল। এরপর এটি প্যারিসের মুসলিম রোগীদের জন্য সংরক্ষিত হয়। হাসপাতালটি প্যারিস পুলিশ সদর দফতরের অধীনে স্থাপন করা হয়েছে এবং উত্তর আফ্রিকার নেটিভদের নজরদারি ও সুরক্ষার জন্য পরিসেবাটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে (এসএসপিআইএনএ, এখন উত্তর আফ্রিকার আদিবাসী বিষয়ক পরিষেবা) ।

প্রথমিকভাবে, প্যারিসের অন্যান্য হাসপাতালে উপস্থিত সমস্ত মুসলমানকে পুলিশী বাসে করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতো।আলজেরিয়ার মিত্র সম্প্রদায়ের প্রিন্সিপাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অ্যাডল্ফ গেরোমালি, যিনি এই সেবার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন (প্যারিসে রেকু লেকোম্টে) ছিলেন ফ্রাঙ্কো-মুসলিম হাসপাতাল এবং নার্সিং স্কুলের প্রথম পরিচালক। (১৯৩২ সালে নিযুক্ত)

ফ্রেঞ্চো-মুসলিম হাসপাতালের যক্ষ্মা সেবার কর্ণধার অধ্যাপক আলী সাক্কা ১৯৪০ সালে জার্মানরা এলে পদত্যাগ করেছিলেন।

মূলত ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি উত্তর আফ্রিকার নির্দিষ্ট প্যাথলজির জন্য মূল ভবনের কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রশাসনিক এবং সাধারণ পরিষেবা কার্য রয়েছে। বাম দিকটি হ’ল যক্ষ্মা রোগীদের, ডান দিকটি যা সাধারণ ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের। সম্পূর্ণটি বহিরাগত রোগীদের জন্য নিবেদিত একটি বৃহত্তর পরীক্ষাগার এবং একটি গবেষণার ভূমিকাও পালন করছে ।
এই সময়ের মধ্যে, নার্সিং কর্মীদের একটি বড় অংশ আরবি বা কাবিল কথা বলে এবং বেশিরভাগ চিকিত্সক উত্তর আফ্রিকার সাথে যুক্ত। ছাত্র নার্সরা আরব সংস্কৃতি এবং ভূগোলের বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। হাসপাতালটি মরক্কো, আলজেরিয়া এবং তিউনিসিয়া থেকে ইন্টার্ন এবং ওয়েন্টার্নকে স্বাগত জানিয়ে উত্তর আফ্রিকার মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি রেফারেন্সে পরিণত হয়েছে।

১৯৪০ সালের নভেম্বরে, জার্মান সেনাবাহিনী কর্তৃক এই হাসপাতালটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল কারণ এটি ছিল নতুন এবং তত্কালীন অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত। যক্ষ্মা সেবার কর্ণধার অধ্যাপক আলী সাক্কা দখলকারীদের আগমনের আগে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর ইন্টার্ন আহমেদ সোমিয়া, বোবিনির টাউনহলের সাহায্যে, মেডিকেল ডিভাইসগুলি টাউন হলের একটি সংযুক্তিতে “স্থানান্তরিত” করেছিলেন। হাসপাতালের নিজস্ব পরীক্ষাগারে, ফার্মাসিস্ট অ্যালিস রোলন বোবিনী জনগণের সুবিধার জন্য একটি গবেষনাগার চালু করেন।( Résistance Avicenne » (consulté le 8 mars 2018))

১৯৪৫ এর পরে, হাসপাতালটি ধীরে ধীরে পুরো জনগণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং মুসলমানদের আর শুধু ববিনীতে সীমাবদ্ধ থাকে নি। প্যারিস পুলিশ সদর দফতরের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে।

১৯৭৮ সালে, হাসপাতাল আরবি আবু আলী আল-হুসেন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সিনা নামে মুসলিমদের অন্যতম মহান ব্যক্তিত্ব অ্যাভিসেনা নামটি গ্রহণ করেছিল। যিনি ছিলেন একই সাথে ডাক্তার, দার্শনিক

অবশেষে
ফ্রান্স হলো পৃথিবীর সেকুলার সব রাষ্ট্রের মধ্যে কট্টর সেকুলার।ধর্ম যুদ্ধের এক দীর্ঘ ইতিহাস জড়িয়ে আছে ফরাসিদের সাথে।এই দেশ ও সম্পদের মালিক ছিলো ক্যাথলিক চার্চের প্রতিনিধিরা।তারা দেশটিকে একটি ধর্মীয় উম্মাদনায় ভরে দিয়েছিলো।সুদীর্ঘ দশ বছরের স্বসশ্র সংগ্রামের মাধ্যমে তাদেরকে পরাজিত করে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলো এই ফরাসি জাতি।
এ ব্যাপারে শায়খুল আজহার মোস্তফা আব্দুররাজ্জাক(1919 )বলেন-“প্যারিস হলো পৃথিবীর রাজধানী।পরকালে যদি কোন রাজধানী থাকতো তাহলে তা হতো প্যারিস।”এখানেই আছে ডান ও বামদের খেলা।কমিউনিজমের প্রথম উত্থান হয়েছে এখানেই। ১৮৭১ সালে।

প্যারিস হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম রাজধানী যেখানে তার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরবোনের ফটকে একজন মুসলিম দার্শনিক ইবনে সীনার স্ট্যাচু নির্মাণ করেছে।প্রথম ফ্রান্কো মুসলিম হসপিটাল তৈরি হয়েছে।যা আজ ‘আবিসান হপিটাল’ হিসেবে অতীত মুসলমানদের হাসি কান্নার নিরব সাক্ষী হয়ে আছে।ইবনে সীনার নামে লীল শহরে ইউরোপিয়ান ইবনে সীনা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ইউরোপের প্রথম দেশ ফ্রান্স যা মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে।বাদশা হারুনুর রশিদ সেসময়ের ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারলম্যানকে একটি অত্যাধুনিক ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন।ফ্রান্সই হলো ইউরোপের প্রথম দেশ যে উসমানি খেলাফতকে স্বীকৃতি দিয়ে ছিলো এবং খেলাফতের সাথে ফ্রান্সের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত ছিলো।তাই সর্বপ্রথম ১৭২০ সালে উসমানি খেলাফত তাদের রাষ্ট্রদূত পাঠায় ফ্রান্সে।তিনি ছিলেন মোহাম্মদ আফেন্দি। যিনি তার ব্যক্তিগত ডাইরীতে লিখেছিলেন যে,ফ্রান্স হলো মুশরিকদের জান্নাত।ফ্রান্সের ভলতিয়ার ইসলামের নবী মোহাম্মদ সঃ সম্পর্কে বলেছিলেন -“মোহাম্মদ যার ধর্ম হলো বিজ্ঞানময়,পবিত্র এবং মানবিক।”
ফ্রান্স হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রাচ্যবিদদের স্থান।বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ ও বিশ্ববিখ্যাত সার্জন ডঃ মরীস বুকালী ছিলেন ফরাসি মুসলিম।
(লেখক বদরুল ইসলাম বিন হারুন ফ্রান্স প্রবাসী শিক্ষাবিদ ও লেখক)

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্রান্সে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে করোনার মধ্যেই শিশুদের মাঝে নতুন রোগের হানা

স্বদেশ গমন উপলক্ষে আবু বক্করকে সংবর্ধনা প্রদান

ফ্রান্সে মুসলিম ঐতিহ্যের নিরব সাক্ষী (হপিটাল আভিন্সান) ইবনে সিনা হাসপাতাল

আপডেট সময় ১০:২২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বদরুল ইসলাম বিন হারুন- দীর্ঘদিন বাঘের বাচ্চাদেরকে খাচায় বন্ধীকরে পিঠে চালকের ঘা দিয়ে প্রশিক্ষিত করে লালন পালনের মাধ্যমে তাকে তার চৌদ্দগুষ্টির নাম ভুলিয়ে দেয়া সম্ভব।এর ফলে এক সময় শিশুরা তার উপর ছুয়ার হয়।তাকে নিয়ে খেলতামাশায় মেতে ওঠে।এদিকে বেচারা তার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে নিজেকে এক সময় গাধার প্রজাতি হিসেবে তার নিয়তি মেনে নেয়।

শিক্ষা দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া মুসলিম জাতি তাদের বাপ দাদার আসল ইতিহাস ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে সিংহ শাবকরা আজ নিজেদেকে গাধা ভাবছে ।তারা এখন নিজ দেশেও পরবাসী ।

কথা বলছি একটি ঐতিহাসিক হসপিটাল নিয়ে। মুসলিম ইতিহাসের এক মিনার যা ফ্রান্সের মুসলমানদের এক গৌরবোজ্জল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে যুগের পর যুগ।আজ আত্মভুলা কয়জন মুসলমান তার খবর রাখি।

ফ্রান্স কেন মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

ফ্রান্সের সাথে পশ্চিম আরব ও আফ্রিকার সম্পর্ক রয়েছে দীর্ঘ দিনর। আফ্রিকায় ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে লক্ষ লক্ষ আফ্রো-আরব মুসলিম ফ্রান্সের পক্ষে যুদ্ধ করে জীবন দেন ।।তাদের এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবদানের স্বীকৃতির জন্য প্রতিষ্ঠা করে ববিনীতে অবস্থিত কালের সাক্ষী ইবনে সিনা হসপিটাল।

hôpital avisenen বা ইবনে সিনা হসপিটাল

১৯৩৫ সালে প্যারিস বড় মসজিদের দশ বছর পর উত্তর আফ্রিকান ইমিগ্র্যান্টদের ত্যাগ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুসলমানদের অবদানের স্বীকৃতির প্রতিক হিসেবে (Hôpital franco-musulman de Paris) ফরাসী সরকার প্রদান করেছিলো।এই হসপিটালটি আজ ফ্রান্সের একটি গৌরবময় হসপিটাল এবং ঐতিহাসিক স্থান।
১৯৭৮ সালে হসপিটালটির নাম পরিবর্তন করে ঐতিহাসিক ইবনে সীনার নামে নাম করণ করা হয়।(ইনসাক্লোপিডডিয়া বৃটানিকা hôpital avicenne de paris 2016)

এই উদ্বোধনের প্রত্যক্ষ বর্ধন হিসাবে, আলজিয়ার্সের একজন ডাক্তার, আমাদি লাফোঁট, প্রকাশ্যভাবে প্যারিস অঞ্চলে মুসলমানদের, একটি হাসপাতালের ধারণা চালু করেছিলেন। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় এভাবে একটি ” কমিটি” গঠন করা হয়েছিল [

প্রকল্পটি আন্ড্রে-পিয়েরি গডিন (১৯৫৪) প্যারিসের পৌর কাউন্সিলর এবং আলজেরিয়ার প্রাক্তন উপনিবেশিক প্রশাসক দ্বারা পরিচালিত হয়। তিনি উত্তর আফ্রিকান নেটিভদের নজরদারি ও সুরক্ষার জন্য এই সার্ভিসের প্রতিষ্ঠা। প্যারিস অঞ্চলের কারখানায় ভাড়া নেওয়া এবং আরব ও বারবার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার উপর নজরদারি করা।
গডিনের চিন্তা ছিলো-এই হসপিটাল দ্বারা এক দিকে জনসংখ্যার স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা সাথে মুসলমানদের স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যায়ভার নিজ ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া যাবে।নিয়ন্ত্রণ থাকবে নিজ হাতে।হসপিটালটি একটি পুলিশি নজরদারির আওতাভুক্ত থাকবে। ১৯৩০ পর্যন্ত এই হসপিটালটি একটি দ্বিমুখী সুবিধা নীতির আওতায় পরিচালিত ছিলো।

স্বাস্থ্য এবং পুলিশি নজরদারি।

কমিউনিস্ট মেয়র ও স্থানীয়দের তুমুল বাদার মুখে এই হসপিটালটি ববিনীর মুসলিম কবরিস্থানের একটি সস্তা জমিতে স্থাপিত হয়।

৯৩৫ সালের ২২ মার্চ প্যারিসের ফ্রাঙ্কো-মুসলিম হাসপাতালের নামে এই হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছিল। এরপর এটি প্যারিসের মুসলিম রোগীদের জন্য সংরক্ষিত হয়। হাসপাতালটি প্যারিস পুলিশ সদর দফতরের অধীনে স্থাপন করা হয়েছে এবং উত্তর আফ্রিকার নেটিভদের নজরদারি ও সুরক্ষার জন্য পরিসেবাটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে (এসএসপিআইএনএ, এখন উত্তর আফ্রিকার আদিবাসী বিষয়ক পরিষেবা) ।

প্রথমিকভাবে, প্যারিসের অন্যান্য হাসপাতালে উপস্থিত সমস্ত মুসলমানকে পুলিশী বাসে করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতো।আলজেরিয়ার মিত্র সম্প্রদায়ের প্রিন্সিপাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অ্যাডল্ফ গেরোমালি, যিনি এই সেবার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন (প্যারিসে রেকু লেকোম্টে) ছিলেন ফ্রাঙ্কো-মুসলিম হাসপাতাল এবং নার্সিং স্কুলের প্রথম পরিচালক। (১৯৩২ সালে নিযুক্ত)

ফ্রেঞ্চো-মুসলিম হাসপাতালের যক্ষ্মা সেবার কর্ণধার অধ্যাপক আলী সাক্কা ১৯৪০ সালে জার্মানরা এলে পদত্যাগ করেছিলেন।

মূলত ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি উত্তর আফ্রিকার নির্দিষ্ট প্যাথলজির জন্য মূল ভবনের কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রশাসনিক এবং সাধারণ পরিষেবা কার্য রয়েছে। বাম দিকটি হ’ল যক্ষ্মা রোগীদের, ডান দিকটি যা সাধারণ ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের। সম্পূর্ণটি বহিরাগত রোগীদের জন্য নিবেদিত একটি বৃহত্তর পরীক্ষাগার এবং একটি গবেষণার ভূমিকাও পালন করছে ।
এই সময়ের মধ্যে, নার্সিং কর্মীদের একটি বড় অংশ আরবি বা কাবিল কথা বলে এবং বেশিরভাগ চিকিত্সক উত্তর আফ্রিকার সাথে যুক্ত। ছাত্র নার্সরা আরব সংস্কৃতি এবং ভূগোলের বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। হাসপাতালটি মরক্কো, আলজেরিয়া এবং তিউনিসিয়া থেকে ইন্টার্ন এবং ওয়েন্টার্নকে স্বাগত জানিয়ে উত্তর আফ্রিকার মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি রেফারেন্সে পরিণত হয়েছে।

১৯৪০ সালের নভেম্বরে, জার্মান সেনাবাহিনী কর্তৃক এই হাসপাতালটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল কারণ এটি ছিল নতুন এবং তত্কালীন অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত। যক্ষ্মা সেবার কর্ণধার অধ্যাপক আলী সাক্কা দখলকারীদের আগমনের আগে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর ইন্টার্ন আহমেদ সোমিয়া, বোবিনির টাউনহলের সাহায্যে, মেডিকেল ডিভাইসগুলি টাউন হলের একটি সংযুক্তিতে “স্থানান্তরিত” করেছিলেন। হাসপাতালের নিজস্ব পরীক্ষাগারে, ফার্মাসিস্ট অ্যালিস রোলন বোবিনী জনগণের সুবিধার জন্য একটি গবেষনাগার চালু করেন।( Résistance Avicenne » (consulté le 8 mars 2018))

১৯৪৫ এর পরে, হাসপাতালটি ধীরে ধীরে পুরো জনগণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং মুসলমানদের আর শুধু ববিনীতে সীমাবদ্ধ থাকে নি। প্যারিস পুলিশ সদর দফতরের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে।

১৯৭৮ সালে, হাসপাতাল আরবি আবু আলী আল-হুসেন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সিনা নামে মুসলিমদের অন্যতম মহান ব্যক্তিত্ব অ্যাভিসেনা নামটি গ্রহণ করেছিল। যিনি ছিলেন একই সাথে ডাক্তার, দার্শনিক

অবশেষে
ফ্রান্স হলো পৃথিবীর সেকুলার সব রাষ্ট্রের মধ্যে কট্টর সেকুলার।ধর্ম যুদ্ধের এক দীর্ঘ ইতিহাস জড়িয়ে আছে ফরাসিদের সাথে।এই দেশ ও সম্পদের মালিক ছিলো ক্যাথলিক চার্চের প্রতিনিধিরা।তারা দেশটিকে একটি ধর্মীয় উম্মাদনায় ভরে দিয়েছিলো।সুদীর্ঘ দশ বছরের স্বসশ্র সংগ্রামের মাধ্যমে তাদেরকে পরাজিত করে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলো এই ফরাসি জাতি।
এ ব্যাপারে শায়খুল আজহার মোস্তফা আব্দুররাজ্জাক(1919 )বলেন-“প্যারিস হলো পৃথিবীর রাজধানী।পরকালে যদি কোন রাজধানী থাকতো তাহলে তা হতো প্যারিস।”এখানেই আছে ডান ও বামদের খেলা।কমিউনিজমের প্রথম উত্থান হয়েছে এখানেই। ১৮৭১ সালে।

প্যারিস হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম রাজধানী যেখানে তার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরবোনের ফটকে একজন মুসলিম দার্শনিক ইবনে সীনার স্ট্যাচু নির্মাণ করেছে।প্রথম ফ্রান্কো মুসলিম হসপিটাল তৈরি হয়েছে।যা আজ ‘আবিসান হপিটাল’ হিসেবে অতীত মুসলমানদের হাসি কান্নার নিরব সাক্ষী হয়ে আছে।ইবনে সীনার নামে লীল শহরে ইউরোপিয়ান ইবনে সীনা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ইউরোপের প্রথম দেশ ফ্রান্স যা মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে।বাদশা হারুনুর রশিদ সেসময়ের ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারলম্যানকে একটি অত্যাধুনিক ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন।ফ্রান্সই হলো ইউরোপের প্রথম দেশ যে উসমানি খেলাফতকে স্বীকৃতি দিয়ে ছিলো এবং খেলাফতের সাথে ফ্রান্সের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত ছিলো।তাই সর্বপ্রথম ১৭২০ সালে উসমানি খেলাফত তাদের রাষ্ট্রদূত পাঠায় ফ্রান্সে।তিনি ছিলেন মোহাম্মদ আফেন্দি। যিনি তার ব্যক্তিগত ডাইরীতে লিখেছিলেন যে,ফ্রান্স হলো মুশরিকদের জান্নাত।ফ্রান্সের ভলতিয়ার ইসলামের নবী মোহাম্মদ সঃ সম্পর্কে বলেছিলেন -“মোহাম্মদ যার ধর্ম হলো বিজ্ঞানময়,পবিত্র এবং মানবিক।”
ফ্রান্স হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রাচ্যবিদদের স্থান।বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ ও বিশ্ববিখ্যাত সার্জন ডঃ মরীস বুকালী ছিলেন ফরাসি মুসলিম।
(লেখক বদরুল ইসলাম বিন হারুন ফ্রান্স প্রবাসী শিক্ষাবিদ ও লেখক)